পেওরাইট ওহাবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল
শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড। আর একটি বিদ্যালয়ের প্রকৃত শক্তি নিহিত থাকে তার শিক্ষণ কার্যক্রমে। পেওরাইট ওহাবিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় জনগণের সন্তানদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে কাজ করে আসছে। এ বিদ্যালয় কেবল পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক জ্ঞানই প্রদান করে না, বরং শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ, নৈতিকতা, নেতৃত্বগুণ ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষতা অর্জনের দিকেও গুরুত্ব দেয়।
এই বিদ্যালয়ের শিক্ষণ কার্যক্রম এমনভাবে পরিকল্পিত যে, শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে না, বরং সমাজে একজন সৎ, দায়িত্বশীল এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।
শিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য
শিক্ষার্থীদেরকে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করা।
নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নয়ন ঘটানো।
বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস ও প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ করে তোলা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তি জাগ্রত করা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আধুনিক শিক্ষা প্রদান।
সহপাঠ কার্যক্রমের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন।
শিক্ষার্থীদেরকে দেশপ্রেমিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
পাঠদান পদ্ধতি
শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া শিক্ষণ কার্যক্রমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ শিক্ষকরা ব্যবহার করেন বিভিন্ন পদ্ধতি—
লেকচার পদ্ধতি : বিষয়ভিত্তিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ।
আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর : শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ।
গ্রুপ ওয়ার্ক ও প্রজেক্ট : দলগতভাবে সমস্যা সমাধান করার অভ্যাস তৈরি।
ভিজ্যুয়াল ও মাল্টিমিডিয়া : ছবি, ভিডিও, চার্ট ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষা।
মডেল ও ডেমোনস্ট্রেশন : বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক জটিল ধারণা সহজভাবে উপস্থাপন।
প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা
আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব
ইন্টারনেট সুবিধা
মাল্টিমিডিয়া ক্লাস
অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার
ফলে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে।
মূল্যায়ন প্রক্রিয়া
শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা যাচাই করার জন্য বিদ্যালয়ে নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
ত্রৈমাসিক পরীক্ষা
অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা
প্রাক-নির্বাচনী ও বার্ষিক পরীক্ষা
এছাড়াও ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট ও মৌখিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সহায়ক শিক্ষণ কার্যক্রম
বিদ্যালয়ের শিক্ষণ কার্যক্রম কেবল বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে বহুমুখী করতে পরিচালিত হয় নানা ধরনের সহায়ক কার্যক্রম—
কুইজ প্রতিযোগিতা : সাধারণ জ্ঞান ও পাঠ্যবিষয়ক প্রশ্নোত্তর।
বিতর্ক প্রতিযোগিতা : যুক্তি প্রকাশ ও বক্তৃতা দক্ষতা বৃদ্ধি।
বিজ্ঞান মেলা : শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তা প্রকাশের সুযোগ।
প্রবন্ধ রচনা, হাতের লেখা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা।
সহপাঠ কার্যক্রম
শিক্ষার্থীদের মেধার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সহপাঠ কার্যক্রমের ভূমিকা অপরিসীম। বিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়—
খেলাধুলা (ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি)
স্কাউটিং ও গার্লস গাইড কার্যক্রম
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
সামাজিক সেবা কার্যক্রম (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, দরিদ্র সহায়তা ইত্যাদি)
স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি
নৈতিক ও চরিত্র গঠনমূলক শিক্ষা
শিক্ষণ কার্যক্রমের একটি বিশেষ দিক হলো নৈতিক শিক্ষা প্রদান। এখানে শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা, সততা, দায়িত্ববোধ, দেশপ্রেম এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখানো হয়। সকাল ও দুপুরের সমাবেশে জাতীয় সংগীত গাওয়া, দেশপ্রেমমূলক বক্তব্য এবং শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করার জন্য নিয়মিতভাবে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
শিক্ষকবৃন্দের ভূমিকা
বিদ্যালয়ের শিক্ষণ কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার পেছনে রয়েছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ। তাঁরা নিয়মিত পাঠদান ছাড়াও—
শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে সহযোগিতা করেন।
অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে দুর্বল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেন।
পরীক্ষার প্রস্তুতিতে দিকনির্দেশনা দেন।
অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।
স্থানীয় জনগণের ভূমিকা
পেওরাইট ওহাবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষণ কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনায় স্থানীয় জনগণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতা করে, অভিভাবক-শিক্ষক সভায় অংশ নেয় এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিষয়ে সক্রিয় আগ্রহ প্রকাশ করে।
পেওরাইট ওহাবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষণ কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের বহুমাত্রিক বিকাশে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বিদ্যালয় এলাকার শিক্ষাক্ষেত্রে একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। এর মাধ্যমে শুধু পাঠ্যবই নির্ভর জ্ঞান নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তি, নৈতিকতা, সৃজনশীলতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে।
এই শিক্ষণ কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকুক— এমন প্রত্যাশা সকলের